Feature Label 3

0
কিছু মানুষের কাছে প্রযুক্তির দুরূহ নিয়মকে ফুঁত্কারে উড়িয়ে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুঁটিনাটি তথ্য জোগার করা কোনো ব্যাপার নয়। বিশ্বের এরকমই কিছু ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, যারা পুলিশ ডিকশনারিতে বরাবরই ‘মিস্টেরিয়াস পিপল’ নামে পরিচিত।
 আবার অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের মতো কিছু উপকারী হ্যাকারও রয়েছেন, তারা প্রযুক্তি বিশ্বকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। এজন্য তারা পরিচিত হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার নামে।
 স্টিভ জোবস, মার্ক জাকারবার্গের মতো হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের অল্পবিস্তর কর্মজীবন আমরা জানি। কিন্তু যে সব কুখ্যাত ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকাররা গোয়েন্দা ব্যুরোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে, তাদের সম্বন্ধে এবার জেনে নিন।
 কেভিন লি পোলসেন : আশির দশকে কুখ্যাত হ্যাকার ছিলেন মার্কিন সাংবাদিক কেভিন লি পোলসেন। তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন টেলিফোন লাইন হ্যাক করার জন্য। সমস্ত টেলিফোন লাইন হ্যাক করে লস অ্যাঞ্জেলসের রেডিও স্টেশন KIIS-FM-এ দাবী করেছিলেন যে, তিনি হলেন ১০২ লাকি কলার এবং পোরসে ৯৪৪ এস২ গাড়ির পুরস্কার তারই প্রাপ্য।
 এফবিআই তদন্তে নেমে দেখে, পোলসন হলেন ‘কম্পিউটার অপরাধে হেনিবল লেকটার’ চরিত্র। পোলসন গা ঢাকা দিলেও ১৯৯১ ধরা পরে যান তিনি। সাইবার ক্রাইম, কম্পিউটার সংক্রান্ত অপরাধ, স্মাগলিং বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হন পোলসেন। চার বছর জেল খাটার পর জীবন নতুন দিকে মোড় নেয় পোলসেনের। তিনি এখন বেশ পরিচিত সাংবাদিক ওয়ার নিউজ কোম্পানির।
 অ্যালর্বাট গঞ্জালেজ : ২০০৫ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত অ্যালবার্ট ও তার গ্রুপ প্রায় ১৭০ মিলিয়ন কার্ড ও এটিএম নম্বর বিক্রি করে খবরের শিরোনামে আসেন। বলা যেতে পারে, এই প্রথম এটিএম দুর্নীতি নিয়ে এতবড় হাঙ্গামা ঘটে। যা পুলিশ, প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও কীভাবে এটিএম নেটওয়ার্ককে বিকল করেছিল তার কিনারা করে উঠতে পারেনি। গঞ্জালেজ একরকম এসকিউএল ইনজেকশন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন, ইন্টারনেট কর্পোরেট নেটওয়ার্কের যাবতীয় কম্পিউটার ডাটা তার হাতের মুঠোয় ছিল।
 যখন পুলিস অ্যালবার্টকে গ্রেফতার করে, তার ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছিল ১.৬ মিলিয়ন ডলার ক্যাশ। তার মধ্যে তিন ফুট লম্বা ড্রামে ১.১ মিলিয়ন ডলার অর্থ বাড়ির পিছনে মাটির তলায় পুঁতে রেখে ছিলেন। অ্যালবার্ট গঞ্জালেজকে ২০ বছরের কারাদণ্ড শাস্তি ঘোষণা করা হয়।
 ভ্লাদিমির লেভিন : ভ্লাদিমির লেভিন কে বলা যেতে পারে ১৯৪০ সালের  জেমস বন্ড। রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ভ্লাদিমির ছিলেন একজন মেধাবী গণিতজ্ঞ। সেন্ট পিটারস বার্গ স্টেট ইনস্টিটিউট থেকে বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৪৪ ভ্লাদিমির ১০ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার করেন নিজের অ্যাকাউন্টে ডায়েল আপ ওয়ার ট্রান্সফার সার্ভিসের মাধ্যেমে। ফিলন্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইজরায়েলের মতো বিভিন্ন দেশের সিটি ব্যাংকের কয়েক হাজার অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি।
 রবার্ট তপ্পন মরিস : ‘মরিস ওয়ার্ম’ নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন! ১৯৮৮ সালের ২ নভেম্বর রবর্টা মরিস তৈরি করেন কম্পিউটার ওয়ার্ম। এটিই প্রথম ভাইরাস, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে বিভিন্ন মূল্যবান তথ্যকে নষ্ট করতো। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাইরাসটি প্রকাশ করেন তিনি। ইন্টারনেটের মধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে Unix sendmail, finger, rsh/rexec অর্থাৎ দুর্বল পাসওয়ার্ড নষ্ট করে দেয় এটি।
 ১৯৮৯ সালে United States Code Title 18 লঙ্ঘন করার কারণে কম্পিউটার ফ্রড ও অ্যাবিউস অ্যাক্টে  দোষী অভিযুক্ত হন। তিনি প্রথম ব্যক্তি এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হন।
 মাইকেল কেল্স : মাইকেল কেল্স হলেন ইন্টারনেট দুনিয়ার ‘মাফিয়া বয়’। পেটে বিদ্যা না থাকলেও মগজে বুদ্ধি ছিল কল্পনাতীত। কিউবেকের এই মাফিয়া বয় মাত্র হাই স্কুল পাস করে ইয়াহু, আমাজন, ডেল, ইবে. সিএনএনের মতো বিশ্বের তাবড় তাবড় কোম্পানিকে ঘোল খাইয়ে রেখেছিলেন। ২০০০ সালে মাইকেল কেল্স তৈরি করেন denial-of-service, যা বড় বড় কমার্শিয়াল ওয়েবসাইট হ্যাক করার ক্ষমতা রাখে। তিনি এক ঘণ্টার জন্য সেই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুকে হ্যাক করেন। এছাড়া যেকোনো ওয়েবসাইটেক নিজের খুশি মতো হ্যাক করে তার গ্রুপ TNT কতৃত্ব রাখত। ২০০১ সালে মনট্রিয়েল ইয়থ কোর্ট ৮ মাসের জন্য মাইকেলকে নজরদারি রাখার নির্দেশ দেন ও ইন্টারনেট ব্যবহার না করার নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
 ডেভিড স্মিথ: ম্যালিসা ম্যাক্রো ভাইরাস তৈরি করে বেশ নাম করেছিলেন। প্রোগ্রামার ডেভিড স্মিথ নিজেকে Kwyjibo নামে পরিচয় দিতেন। তার তৈরি ভাইরাসের বিশেষত্ব হলো আউটলুকের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মূল্যবান ফাইলগুলোকে নষ্ট করা।
 মাইক্রোসফট, ইন্টেল, লুসেন্ট কোম্পানিরা তাদের ই-মেইল গেটওয়েতে ম্যালিসা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয় তারা। দেখা গেছে উত্তর আমেরিকায় বড় বড় কোম্পানির কম্পিউটারে ম্যালিসা ভাইরাস আক্রমণে ৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয় তাদের ব্যবসায়।
অ্যান্ড্রিয়ান লামো : ছদ্মনাম ‘দ্য হোমলেস হ্যাকার’। ২০০৩ সালে অ্যাড্রিয়ান লামো খবরের শিরোনামে উঠে আসে মাইক্রোসফট, ইয়াহু, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, এমসিআই ওয়ার্ল্ডকমের হাইপ্রোফাইল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ভাঙার কারণে। টাইমস অভিযোগ দায়ের করলে লামোর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
 কয়েক বছর নজরদারি থাকার পর ২০১০ আবারো লামো খবরের শিরোনামে আসে। ২০০৭ সালের ১২ জুলাই বাগদাদ এয়ারস্ট্রাইকের ভিডিও ফাঁস হওয়ার পেছনে ব্রাডলে ম্যানিং ছিলেন এই খবর মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে প্রকাশ করেন। এই নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায় আমেরিকা। এখন তিনি একজন থ্রেট অ্যানালাইসিস্ট হিসেবে কাজ করছেন নন-প্রফিট সংস্থায়।
 জর্জ হটজ : জর্জ হটজ হলেন প্রথম ব্যক্তি ‍যিনি আইফোন অপারেটিং সিস্টেম ব্রেক করেছিলেন। ২০০৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইফোন অপারেটিং সিস্টেম ব্রেক করে চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে। এছাডা়ও তিনি ডেভেলপ করেন আইফোন অপারেটিং সিস্টেম নষ্ট করার জন্য ‘জেলব্রেক টুল‘ ও ‘বুট্রম’। সনি প্লে স্টেশন থ্রি ব্রেক করার পর সনি কোম্পানির সঙ্গে তুমুল আইনি লড়াই চলে। প্লে স্টেশন নেটওয়ার্ক হ্যাক করে ৭৭ মিলিয়ন ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করে জর্জ হটজের হ্যাকার গ্রুপ।
 জনাথন জেমস : মাত্র ১৬ বছর বয়সে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার জনাথন জেমস সাইবার ক্রাইম অপরাধে জেল খাটেন। নাসা ও প্রতিরক্ষার মতো সংস্থার সিস্টেম হ্যাক করেছিলেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে। তিনি নাকি প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সফটওয়্যার চুরি করেছিলেন। ২০০৮ সালে জেমস আত্মহত্যা করেন এবং সুইসাইট নোটে লিখে গিয়েছিলেন ‘বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার বিশ্বাস নেই… যাই হোক আজকের আমার কাজ ও চিঠি জনগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছাবে…আমি সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের বাইরে আর এখান থেকে বেরিয়ে আসার এটাই একমাত্র পথ…’
 গ্যারি ম্যাককিনন : ১২ বছর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা অফিসের কম্পিউটারে একটি মেসেজ দেখায় ‘Your security system is crap, I am Solo. I will continue to disrupt at the highest levels’। খোদ প্রতিরক্ষা দফতরে নিরাপত্তার অশনি সংকেত। অনেক তদন্ত হওয়ার পর জানা যায়, এই কর্মকাণ্ডের পিছনে রয়েছে স্কটিশ সিস্টেম ডেভেলপার গ্যারি ম্যাককিনন।
গ্যারি নিজের কাজের মধ্যে সারাক্ষণ ডুবে থাকতেন। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে রাখতেন বাইরের জগত থেকে। ডাক্তারি ভাষায় তিনি অ্যাসপারজার রোগে ভুগছেন। কিন্তু তার সফটওয়ার সম্বন্ধে গভীরতা ও জ্ঞান দেখে বিস্ময় বনে গিয়েছেন তাবড় তাবড় হ্যাকাররা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি, নৌবাহিনী, নাসার মতো বড় বড় সরকারী দফতরে ৯৭টি কম্পিউটার হ্যাক করেন। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতি হয় ৭ লাখ ডলার। তিনি UFO নিয়েও গবেষণা করেছিলেন।

Post a Comment

Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.

Emoticon
like dislike :) ;(( :-) ;-( :d :o :>) (o) [-( :-? (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.